প্রিয় টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? চাকরির বাজারে নিজেদের জায়গা করে নেওয়াটা যেন দিন দিন আরও কঠিন হয়ে উঠছে, তাই না? বিশেষ করে যখন লিখিত পরীক্ষার নাম শুনি, তখন মনে হয় যেন একটা বিশাল পাহাড় ডিঙাতে হবে!
আমি জানি, অনেক স্বপ্ন নিয়ে পড়াশোনা শেষ করার পর, এই বাধাটা পেরোনো অনেকের জন্যই বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়ায়। চারপাশে এখন তীব্র প্রতিযোগিতা, শুধু রেফারেন্স দিয়ে আর কাজ হয় না। এখন তো শুধু বইয়ের পড়ায় সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না, টেক্সটাইল সেক্টরে নতুন কী আসছে, AI কীভাবে কাজ বদলে দিচ্ছে, টেকসই ফ্যাশন আর ডিজিটাইজেশনের ভবিষ্যৎ কী – এসব বিষয়েও ওয়াকিবহাল থাকাটা খুব জরুরি। আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, যারা নিজেদেরকে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে প্রস্তুত করে, কোর সাবজেক্টের পাশাপাশি সাধারণ জ্ঞান, গণিত আর ইংরেজিতেও শাণিত হয়, তারাই শেষ হাসি হাসে।হতাশ হওয়ার কিছু নেই!
কারণ, সঠিক প্রস্তুতি আর কিছু দারুণ কৌশল জানা থাকলে আপনিও আপনার স্বপ্নের চাকরির দুয়ার খুলতে পারবেন। আজকের ব্লগে আমরা তেমনই এক অদম্য টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারের সফলতার গল্প তুলে ধরব, যিনি দেখিয়েছেন কীভাবে অধ্যবসায় আর স্মার্ট প্রস্তুতির মাধ্যমে এই কঠিন পথ পাড়ি দেওয়া যায়। তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাগুলো আমাদের জন্য হতে পারে দারুণ এক দিকনির্দেশনা, যা আপনাকেও এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। আসুন, তাঁর সফলতার পেছনের সব অজানা গল্প আর কার্যকরী কৌশলগুলো বিস্তারিত জেনে নিই!
বর্তমান টেক্সটাইল বাজারে টিকে থাকার গোপন মন্ত্র

বন্ধুরা, আমি তো জানি চাকরির বাজারটা এখন কতটা কঠিন! বিশেষ করে আমাদের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য, প্রতিটা ধাপে যেন নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ। শুধু ভালো রেজাল্ট থাকলেই যে সব হয়ে যাবে, এমনটা কিন্তু আর নেই। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এখনকার নিয়োগকর্তারা শুধু পুঁথিগত বিদ্যা খুঁজছেন না, তারা চান এমন কর্মী যারা বাস্তব সমস্যা সমাধানে দক্ষ, নতুন প্রযুক্তির সাথে মানিয়ে নিতে পারে এবং সর্বোপরি, শেখার আগ্রহ আছে। আগে যেমন শুধুমাত্র রেফারেন্স দিয়ে অনেক কাজ হতো, এখন সেই দিন আর নেই বললেই চলে। এখন প্রতিযোগিতা এতটাই তীব্র যে, রেফারেন্সের পাশাপাশি নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দেওয়াটা ভীষণ জরুরি। তাই শুধু টেক্সটাইল কোর সাবজেক্টগুলো পড়লে চলবে না, বরং নিজেদেরকে মাল্টিটাস্কিং এবং মাল্টি-স্কিলড হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আমি দেখেছি, যারা নিজেদেরকে একটু ভিন্নভাবে উপস্থাপন করতে পারে, যারা জানে কীভাবে নিজের দক্ষতাকে আরও শাণিত করতে হয়, তারাই শেষ পর্যন্ত ভালো একটা জায়গায় পৌঁছাতে পারে। বাজারের চাহিদা অনুযায়ী নিজেদেরকে আপডেটেড রাখাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ টেক্সটাইল শিল্প প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে।
শুধু বইয়ের পাতায় নয়, বাস্তব অভিজ্ঞতাও জরুরি
একথাটা আমি বারবার বলি, শুধু বই পড়ে ভালো নম্বর পেলেই সবকিছু পাওয়া যায় না। টেক্সটাইল সেক্টরে কাজ করতে হলে হাতে-কলমে অভিজ্ঞতা থাকাটা খুব দরকার। বিভিন্ন ইন্টার্নশিপ, ছোটখাটো প্রজেক্ট বা এমনকি ফ্যাক্টরিতে গিয়ে কাজ দেখা – এই অভিজ্ঞতাগুলো আপনার সিভিকে অনেক সমৃদ্ধ করবে। আমি যখন প্রথমবার ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম, তখন আমার একাডেমিক রেজাল্ট বেশ ভালো ছিল, কিন্তু যখন আমাকে বাস্তব পরিস্থিতির উপর প্রশ্ন করা হলো, তখন মনে হলো যেন আটকে যাচ্ছি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে আমি শিখেছি যে, তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি ব্যবহারিক জ্ঞান না থাকলে নিজেকে পুরোপুরি প্রস্তুত বলা যায় না। আর এখন তো অনলাইন এবং অফলাইনে হাজারো কোর্স আছে, যেখানে প্রজেক্ট-ভিত্তিক কাজ করানো হয়। আমি তো মনে করি, এই ধরনের কোর্সগুলো আমাদের জন্য খুবই উপকারী। এর মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে, ইন্ডাস্ট্রিতে কীভাবে কাজ হয়, কোন সমস্যাগুলো বেশি আসে এবং কীভাবে সেগুলোর সমাধান করতে হয়।
অপ্রত্যাশিত প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত থাকুন
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মৌখিক পরীক্ষায় এমন কিছু প্রশ্ন আসে যা আমরা সচরাচর বইয়ে পাই না। যেমন, ‘আপনি কেন আমাদের কোম্পানিতে কাজ করতে চান?’, ‘আপনার দুর্বলতা কী?’, ‘চাপের মধ্যে কীভাবে কাজ করেন?’ – এই ধরনের প্রশ্নগুলো আপনার ব্যক্তিত্ব এবং মানসিকতার পরীক্ষা নেয়। আমি মনে করি, এই প্রশ্নগুলোর জন্য আগে থেকে প্রস্তুতি রাখাটা খুব জরুরি। আমি একবার ইন্টারভিউতে গিয়েছিলাম, যেখানে আমাকে আমার হবি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল এবং জানতে চাওয়া হয়েছিল যে, আমার হবি কীভাবে আমার টেক্সটাইল ক্যারিয়ারে সাহায্য করতে পারে। প্রথমে একটু থমকে গিয়েছিলাম, কিন্তু পরে গুছিয়ে উত্তর দিয়েছিলাম। তাই বলছি, শুধু টেকনিক্যাল প্রশ্নের উত্তর দেওয়াই যথেষ্ট নয়, বরং নিজের সম্পর্কে এবং নিজের ভাবনাগুলোও স্পষ্ট করে বোঝানোর ক্ষমতা থাকা চাই।
স্মার্ট প্রস্তুতি: পুরনো পদ্ধতিকে বিদায়!
আগে আমরা যেমন শুধুই বই খুলে পাতা উল্টে যেতাম, এখন আর সেই দিন নেই। এখনকার প্রস্তুতি হতে হবে অনেক বেশি স্মার্ট এবং ফোকাসড। কারণ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সিলেবাস বিশাল, আর সব বিষয় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ার মতো সময় বা শক্তি আমাদের সবার থাকে না। তাই আমি যেটা করি, সেটা হলো একটা নির্দিষ্ট পরীক্ষার জন্য আগে বিগত বছরের প্রশ্নগুলো খুব ভালো করে বিশ্লেষণ করি। দেখি কোন টপিকগুলো থেকে বারবার প্রশ্ন আসছে, কোন অংশে বেশি জোর দিতে হবে। এতে একদিকে যেমন সময় বাঁচে, তেমনই অন্যদিকে প্রস্তুতিটা অনেক বেশি কার্যকর হয়। ধরুন, যদি দেখি যে ‘ফ্লুইড মেকানিক্স’ থেকে নির্দিষ্ট কিছু সূত্র বা প্রয়োগ বেশি আসছে, তাহলে সেই অংশগুলোতেই আমি আমার সর্বোচ্চ মনোযোগ দিই। আবার, ‘টেক্সটাইল ফিজিক্স’ বা ‘ফাইবার বিজ্ঞান’ থেকে যদি দেখি বিভিন্ন ফাইবারের বৈশিষ্ট্য বা প্রসেসিং সংক্রান্ত প্রশ্ন বেশি আসে, তাহলে সেগুলোকে হাইলাইট করি। আমি বিশ্বাস করি, এভাবে যদি আমরা একটু প্ল্যান করে এগোতে পারি, তাহলে কঠিন সিলেবাসও সহজ হয়ে যায়।
বেসিক কনসেপ্ট ক্লিয়ার রাখাটা কতটা জরুরি
আমাদের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একটা বড় অংশ হলো বেসিক কনসেপ্ট। অনেকেই হয়তো মনে করি, আরে, এসব তো স্কুল-কলেজে পড়ে এসেছি! কিন্তু বিশ্বাস করুন, চাকরির পরীক্ষায় এই বেসিক কনসেপ্টগুলো থেকেই অনেক ঘুরিয়ে প্রশ্ন করা হয়। যেমন, ‘সুতার কাউন্ট’ বা ‘কাপড়ের গঠন’ সংক্রান্ত প্রশ্নগুলো অনেক সময় সহজ মনে হলেও, একটু গভীর বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় সেখানে অনেক লুকানো প্রশ্ন আছে। আমি একবার একটা পরীক্ষায় ‘ড্রইং’ প্রসেস নিয়ে একটা প্রশ্ন পেয়েছিলাম, যেটা দেখে মনে হয়েছিল খুব সহজ। কিন্তু উত্তর লেখার সময় দেখি, সামান্য একটা কনসেপ্টের অভাবে আমি পুরো উত্তরটা গুছিয়ে লিখতে পারছি না। তখন বুঝতে পেরেছিলাম, বেসিক কনসেপ্ট কতটা জরুরি। তাই যতই আধুনিক প্রযুক্তির কথা বলি না কেন, নিজেদের ভিত্তিটাকে মজবুত রাখাটা খুব দরকার। এতে যেকোনো জটিল প্রশ্নকেও আত্মবিশ্বাসের সাথে মোকাবেলা করা যায়।
অনলাইন রিসোর্স এবং মক টেস্টের সদ্ব্যবহার
এখন তো হাতের মুঠোয় জ্ঞান, তাই না? ইউটিউব, বিভিন্ন অনলাইন ফোরাম, টেক্সটাইল-ভিত্তিক ব্লগ – সবখানেই প্রচুর রিসোর্স পাওয়া যায়। আমি তো সবসময়ই চেষ্টা করি, কোন নতুন ব্লগ পোস্ট বা ভিডিও এল, সেগুলো দেখতে। এতে নতুন টেকনোলজি সম্পর্কে যেমন জানতে পারি, তেমনি বিভিন্ন টেকনিক্যাল টার্মও পরিষ্কার হয়। আর মক টেস্টের কথা কী বলব! এটা তো একটা আশীর্বাদ। চাকরির পরীক্ষার আগে যত বেশি মক টেস্ট দেওয়া যায়, তত আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ে। সময় ম্যানেজমেন্টের একটা ধারণা পাওয়া যায়, ভুলগুলো কোথায় হচ্ছে সেগুলো বোঝা যায় এবং সেগুলোকে শুধরে নেওয়ার সুযোগ থাকে। আমার মনে আছে, প্রথমদিকে মক টেস্ট দিতে গিয়ে আমি সময় শেষ হওয়ার আগেই উত্তর লেখা শেষ করতে পারতাম না। কিন্তু নিয়মিত অনুশীলন করতে করতে এখন আমি অনেক দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে উত্তর দিতে পারি। তাই, অনলাইন রিসোর্স আর মক টেস্টকে কাজে লাগান, দেখবেন সফলতার পথটা অনেক সহজ হয়ে যাবে।
নতুন দিগন্ত: AI, ডিজিটালাইজেশন এবং টেকসই ফ্যাশন
টেক্সটাইল সেক্টর এখন শুধু সুতা আর কাপড়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। এখন তো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI), ডিজিটালাইজেশন এবং টেকসই ফ্যাশন (Sustainable Fashion) এই ইন্ডাস্ট্রির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। আমার মনে হয়, যারা নিজেদেরকে এই নতুন ট্রেন্ডগুলোর সাথে মানিয়ে নিতে পারছে, তারাই অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকবে। আমি নিজে যখন প্রথম AI নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করি, তখন মনে হয়েছিল এটা বুঝি আমাদের কাজের সুযোগ কমিয়ে দেবে। কিন্তু যত জেনেছি, ততই বুঝেছি যে, AI আসলে আমাদের কাজকে আরও সহজ এবং কার্যকর করে তুলছে। যেমন, কোয়ালিটি কন্ট্রোল, ডিজাইন প্রসেস বা সাপ্লাই চেইনে AI এর ব্যবহার এখন খুবই সাধারণ ব্যাপার। এমনকি, প্যাটার্ন মেকিং বা ফোরকাস্টিংয়ের মতো কাজগুলোও AI এর মাধ্যমে অনেক নির্ভুলভাবে করা যায়। তাই শুধু কোর টেক্সটাইল জ্ঞান নয়, এই নতুন প্রযুক্তিগুলো সম্পর্কেও একটা ভালো ধারণা থাকাটা এখন সময়ের দাবি।
টেকসই ফ্যাশন: শুধু ট্রেন্ড নয়, ভবিষ্যতের প্রয়োজন
পরিবেশ সচেতনতা এখন সারা বিশ্বে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি যেহেতু পরিবেশ দূষণে একটা বড় ভূমিকা রাখে, তাই এখন টেকসই ফ্যাশন নিয়ে কাজ করার সুযোগ অনেক বেশি। রিসাইকেলড ফাইবার, অর্গানিক কটন, পরিবেশ-বান্ধব ডাইং প্রসেস – এসব এখন আর শুধু আলোচনার বিষয় নয়, বরং বাস্তবতার অংশ। আমি তো দেখেছি, অনেক বড় বড় ব্র্যান্ড এখন শুধু টেকসই পণ্য তৈরি করছে না, বরং তাদের সাপ্লাই চেইনও পরিবেশ-বান্ধব করার চেষ্টা করছে। এর মানে হলো, আমাদের ইঞ্জিনিয়ারদের জন্যও এই সেক্টরে কাজ করার দারুণ সুযোগ তৈরি হচ্ছে। যারা রিসাইক্লিং টেকনোলজি, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট বা গ্রিন ম্যানুফ্যাকচারিং সম্পর্কে জানে, তাদের চাহিদা এখন তুঙ্গে। তাই আমার মনে হয়, শুধু চাকরির জন্য নয়, বরং পৃথিবীর প্রতি আমাদের একটা দায়বদ্ধতা থেকেও এই বিষয়গুলো সম্পর্কে জানা উচিত।
ডিজিটালাইজেশন: টেক্সটাইল ফ্যাক্টরির নতুন চেহারা
আজকাল অনেক টেক্সটাইল ফ্যাক্টরিতে ডিজিটালাইজেশন হচ্ছে, যেখানে হাতে-কলমে করার অনেক কাজ এখন অটোমেশনের মাধ্যমে হচ্ছে। প্রোডাকশন মনিটরিং থেকে শুরু করে ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট, সবকিছুই এখন সফটওয়্যারের মাধ্যমে কন্ট্রোল করা যায়। আমি একবার একটা স্মার্ট ফ্যাক্টরি ভিজিট করেছিলাম, যেখানে দেখেছিলাম কীভাবে পুরো প্রোডাকশন লাইন একটা সেন্ট্রাল কম্পিউটার থেকে কন্ট্রোল হচ্ছে। কোনো সমস্যা হলে সাথে সাথেই অ্যালার্ট দিচ্ছে, যার ফলে সময় নষ্ট হচ্ছে না এবং প্রোডাক্টিভিটি বাড়ছে। এর মানে হলো, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের এখন শুধু মেশিন চালানো জানলে হবে না, বরং সফটওয়্যার বা ডেটা অ্যানালাইসিস সম্পর্কেও একটা বেসিক ধারণা থাকা দরকার। এই ধরনের দক্ষতাগুলো আমাদের কর্মজীবনের জন্য এক নতুন দিগন্ত খুলে দেবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
কোর সাবজেক্টে দখল: সাফল্যের মূলমন্ত্র
যতই আধুনিক প্রযুক্তির কথা বলি না কেন, আমাদের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কোর সাবজেক্টগুলোই হলো আমাদের আসল শক্তি। ফাইবার বিজ্ঞান থেকে শুরু করে ইয়ার্ন ম্যানুফ্যাকচারিং, ফেব্রিক কনস্ট্রাকশন, ওয়েট প্রসেসিং – প্রতিটি বিষয়ই সমান গুরুত্বপূর্ণ। আর এই বিষয়গুলোতে যাদের গভীর জ্ঞান আছে, তারাই যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেদেরকে প্রমাণ করতে পারে। আমি যখন প্রথম চাকরি পাই, তখন আমার সুপারভাইজার সবসময় বলতেন, “তুমি নতুন টেকনোলজি শিখতে পারো ভালো কথা, কিন্তু তোমার বেসিক যদি দুর্বল থাকে, তাহলে সব অচল।” তাঁর কথাগুলো আমি খুব মনে রেখেছি। কারণ, যেকোনো নতুন সমস্যা বা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হলে আমাদের এই কোর জ্ঞানের প্রয়োজন হবেই। ধরুন, একটা নতুন ধরনের ফাইবার নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে, তখন যদি ফাইবারের মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলো সম্পর্কে ভালো ধারণা না থাকে, তাহলে কাজটা কঠিন হয়ে যায়। তাই, সময় নিয়ে এই বিষয়গুলো খুব ভালোভাবে আয়ত্ত করাটা খুব দরকারি।
গুরুত্বপূর্ণ কোর সাবজেক্ট এবং তাদের প্রয়োগ
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অনেকগুলো কোর সাবজেক্ট আছে, কিন্তু কিছু সাবজেক্টের ওপর আমাদের বিশেষ নজর রাখা উচিত। যেমন, ‘ফাইবার বিজ্ঞান’ (Fiber Science) কারণ যেকোনো টেক্সটাইল পণ্যের শুরুই হলো ফাইবার। ‘ইয়ার্ন ম্যানুফ্যাকচারিং’ (Yarn Manufacturing) এবং ‘ফেব্রিক কনস্ট্রাকশন’ (Fabric Construction) তো অবশ্যই, কারণ সুতা ও কাপড়ের উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে হবে। ‘ওয়েট প্রসেসিং’ (Wet Processing) যেখানে ডাইং, প্রিন্টিং এবং ফিনিশিংয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করা হয়। এবং সবশেষে, ‘টেক্সটাইল টেস্টিং এবং কোয়ালিটি কন্ট্রোল’ (Textile Testing & Quality Control) – কারণ গুণগত মান নিশ্চিত করাটা খুব জরুরি। এই সাবজেক্টগুলো শুধু মুখস্থ করলেই হবে না, বরং এদের বাস্তব প্রয়োগগুলোও জানতে হবে। আমি নিজে সব সময় চেষ্টা করতাম প্রতিটি বিষয়কে হাতে-কলমে বোঝার, ছোট ছোট প্রজেক্টের মাধ্যমে সেগুলোকে কাজে লাগানোর।
| কোর সাবজেক্ট | গুরুত্বপূর্ণ টপিক | বাস্তব প্রয়োগ |
|---|---|---|
| ফাইবার বিজ্ঞান | প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম ফাইবারের বৈশিষ্ট্য, শ্রেণিবিভাগ | নতুন ফাইবার নির্বাচন, মিশ্রিত ফ্যাব্রিকেশন |
| ইয়ার্ন ম্যানুফ্যাকচারিং | স্পিনিং প্রসেস, সুতার প্রকারভেদ, ত্রুটি | সুতার গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ, নতুন সুতা তৈরি |
| ফেব্রিক কনস্ট্রাকশন | ওয়েভিং, নিটিং, নন-ওভেন প্রযুক্তি | বিভিন্ন ধরনের কাপড় তৈরি, ডিজাইন ডেভেলপমেন্ট |
| ওয়েট প্রসেসিং | ডাইং, প্রিন্টিং, ফিনিশিং প্রসেস, রাসায়নিক | কাপড়ের রঙ ও গুণগত মান উন্নয়ন |
| টেক্সটাইল টেস্টিং | ফাইবার, সুতা, কাপড়ের পরীক্ষার পদ্ধতি | পণ্যের মান যাচাই, ত্রুটি বিশ্লেষণ |
সাধারণ জ্ঞান, গণিত ও ইংরেজি: সামগ্রিক সাফল্যের ভিত্তি
শুধু টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিষয়গুলো জানলেই হবে না, আজকাল চাকরির পরীক্ষায় সাধারণ জ্ঞান, গণিত এবং ইংরেজি এই তিনটি বিষয়েও ভালো দখল থাকাটা খুব জরুরি। আমি জানি, অনেকের কাছে এটা একটা বাড়তি বোঝা মনে হতে পারে, কিন্তু বিশ্বাস করুন, এই বিষয়গুলো আপনাকে অন্যদের থেকে অনেক এগিয়ে রাখবে। অনেক সময় দেখা যায়, টেকনিক্যাল বিষয়ে অনেকেই ভালো, কিন্তু এই তিনটি বিষয়ের দুর্বলতার কারণে তারা ভালো সুযোগ হাতছাড়া করে ফেলে। আমার এক বন্ধু ছিল, যে টেকনিক্যাল বিষয়ে অসাধারণ ছিল, কিন্তু ইংরেজিতে তার খুব দুর্বলতা ছিল। ফলে ইন্টারভিউ বোর্ডের সামনে সে নিজেকে ঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারতো না, এমনকি লিখিত পরীক্ষাতেও তার সমস্যা হতো। শেষ পর্যন্ত তাকে অনেক স্ট্রাগল করতে হয়েছিল একটা ভালো চাকরি পেতে। তাই বলছি, এই তিনটি বিষয়কে অবহেলা করা মানে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা।
গণিত ও ইংরেজির গুরুত্ব
গণিত আমাদের লজিক্যাল থিংকিং বাড়ায় এবং সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা তৈরি করে, যা যেকোনো ইঞ্জিনিয়ারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চাকরির পরীক্ষায় যে ধরনের গণিত আসে, সেগুলো বেশিরভাগই অষ্টম থেকে দশম শ্রেণির পাঠ্যবই থেকে আসে, তাই একটু মনোযোগ দিয়ে অনুশীলন করলেই ভালো করা সম্ভব। আর ইংরেজি? এটা তো এখন আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ভাষা। মেইলে ক্লায়েন্টের সাথে কথা বলা, রিপোর্ট লেখা, প্রেজেন্টেশন দেওয়া – সবখানেই ইংরেজির ব্যবহার। যারা ইংরেজিতে সাবলীল, তাদের আত্মবিশ্বাস অনেক বেশি থাকে এবং তারা দ্রুত অন্যদের সাথে মানিয়ে নিতে পারে। আমি তো সবসময়ই চেষ্টা করি ইংরেজি সংবাদপত্র পড়তে বা ইংরেজি মুভি দেখতে, এতে একদিকে যেমন শব্দভান্ডার বাড়ে, তেমনই অন্যদিকে শোনার দক্ষতাও বৃদ্ধি পায়।
নিয়মিত সাধারণ জ্ঞান চর্চা

সাধারণ জ্ঞান শুধু চাকরির পরীক্ষার জন্য নয়, বরং একজন সচেতন নাগরিক হিসেবেও আমাদের জানা উচিত। দেশের অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, খেলাধুলা – সবকিছু সম্পর্কে একটা বেসিক ধারণা থাকাটা দরকার। অনেক সময় ইন্টারভিউতে সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্ন করা হয়, যা আপনার মানসিক তীক্ষ্ণতা এবং পারিপার্শ্বিকতা সম্পর্কে সচেতনতার প্রমাণ দেয়। আমি প্রতিদিন অন্তত ১৫-২০ মিনিট সাধারণ জ্ঞানের বই পড়ি বা অনলাইনে খবর দেখি। এতে করে নিজেকে আপডেটেড রাখতে পারি এবং যেকোনো আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে পারি। এই ছোট ছোট অভ্যাসগুলোই আমাদের ব্যক্তিত্বকে আরও সমৃদ্ধ করে তোলে।
আত্মবিশ্বাস ও যোগাযোগ দক্ষতা: নিজেকে তুলে ধরার কৌশল
সবকিছুই ভালো জানেন, কিন্তু যদি নিজেকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে না পারেন, তাহলে সব পরিশ্রমই বৃথা। আত্মবিশ্বাস এবং যোগাযোগ দক্ষতা – এই দুটি গুণ আমাদের কর্মজীবনের জন্য খুবই জরুরি। ইন্টারভিউ বোর্ডে যখন আপনি কথা বলছেন, তখন আপনার চোখের ভাষা, বসার ভঙ্গি, কথার স্পষ্টতা – সবকিছুই গুরুত্বপূর্ণ। আমি নিজে যখন প্রথম ইন্টারভিউতে গিয়েছিলাম, তখন খুব নার্ভাস ছিলাম। অনেক কিছু জানতাম, কিন্তু বলতে গিয়ে সব গুলিয়ে ফেলেছিলাম। পরে আমার একজন সিনিয়র আমাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, ‘শিখছিস ভালো কথা, কিন্তু বলতেও শিখতে হবে।’ সেই থেকে আমি নিজেকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অনুশীলন করতাম, বন্ধুদের সাথে মক ইন্টারভিউ দিতাম। এর ফলাফল আমি নিজেই দেখেছি, ধীরে ধীরে আমার আত্মবিশ্বাস বেড়েছে এবং এখন আমি অনেক সাবলীলভাবে কথা বলতে পারি।
নেটওয়ার্কিং: সম্পর্কের জাল বিস্তার
নেটওয়ার্কিং মানে শুধু বন্ধু তৈরি করা নয়, বরং পেশাগত সম্পর্ক তৈরি করা। টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রির বিভিন্ন ইভেন্টে যাওয়া, সেমিনারে অংশগ্রহণ করা বা এমনকি লিংকডইনের মতো প্ল্যাটফর্মে যুক্ত থাকা – এগুলো আমাদের নেটওয়ার্ক বাড়াতে সাহায্য করে। আমি বিশ্বাস করি, ভালো নেটওয়ার্কিং আপনাকে নতুন সুযোগের সন্ধান দিতে পারে। অনেক সময় চাকরির খবর আমরা এসব নেটওয়ার্ক থেকেই পাই, যা হয়তো অন্য কোনো মাধ্যমে পাওয়া যেত না। আমার নিজের একটা চাকরির সুযোগ এসেছিল আমার একজন সিনিয়র দাদার মাধ্যমে, যিনি আমাকে একটা কোম্পানির রিক্রুটমেন্ট সম্পর্কে জানিয়েছিলেন। তাই বলছি, শুধু নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে অন্যদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করুন, তাদের কাছ থেকে শিখুন এবং নিজেদের অভিজ্ঞতাও তাদের সাথে শেয়ার করুন।
সমালোচনা গ্রহণ এবং নিজেকে উন্নত করা
আমরা সবাই ভুল করি, তাই না? কিন্তু সেই ভুল থেকে শেখাটা খুব জরুরি। যখন কেউ আমাদের কাজের সমালোচনা করে, তখন অনেকেই মন খারাপ করে ফেলি। কিন্তু আমি মনে করি, সমালোচনা হলো নিজেকে আরও উন্নত করার একটা সুযোগ। যখন কেউ আমার কোনো ভুল ধরিয়ে দেয়, তখন আমি সেটা মনোযোগ দিয়ে শুনি এবং বোঝার চেষ্টা করি যে, কোথায় আমার উন্নতি প্রয়োজন। এতে একদিকে যেমন আমার দক্ষতা বাড়ে, তেমনই অন্যদিকে অন্যদের কাছেও আমি আরও গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠি। এই মানসিকতা আমাদের শুধু কর্মজীবনেই নয়, বরং ব্যক্তিগত জীবনেও সফল হতে সাহায্য করে।
সাক্ষাৎকার প্রস্তুতি: শেষ ধাপের বিজয়
যখন আমরা লিখিত পরীক্ষার ধাপ পেরিয়ে সাক্ষাৎকারের জন্য নির্বাচিত হই, তখন মনে হয় যেন পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছে গেছি। কিন্তু বিশ্বাস করুন, সাক্ষাৎকারটাই আসল পরীক্ষা! এখানে আপনার ব্যক্তিত্ব, জ্ঞান এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা যাচাই করা হয়। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীও শুধু সাক্ষাৎকারের ভয়ে বা প্রস্তুতির অভাবে ছিটকে পড়ে। তাই, সাক্ষাৎকারের জন্য আগে থেকে নিজেকে ভালোভাবে প্রস্তুত করাটা খুব জরুরি। আমি তো সবসময় সাক্ষাৎকারের জন্য একটা আলাদা খাতা তৈরি করি, যেখানে সম্ভাব্য সব প্রশ্ন এবং তাদের উত্তরগুলো লিখে রাখি। এরপর সেগুলোকে বারবার অনুশীলন করি, যাতে আত্মবিশ্বাসের সাথে উত্তর দিতে পারি।
সাধারণ ভুলগুলো এড়িয়ে চলুন
সাক্ষাৎকারের সময় কিছু সাধারণ ভুল আছে যা আমরা প্রায়ই করে থাকি। যেমন, দেরি করে পৌঁছানো, অপরিষ্কার পোশাক পরা, আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখানো বা অপ্রাসঙ্গিক কথা বলা। এই ভুলগুলো আপনার প্রথম ইম্প্রেশনটাই নষ্ট করে দেয়। আমি একবার ইন্টারভিউতে গিয়েছিলাম, যেখানে এক প্রার্থীকে দেখেছিলাম, যে এতটাই নার্ভাস ছিল যে প্রশ্ন শুনেই ঘামতে শুরু করেছিল। তার পোশাকও ছিল বেশ অগোছালো। এসব ছোট ছোট বিষয় হয়তো অনেকের কাছে তেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় না, কিন্তু নিয়োগকর্তাদের কাছে এগুলো অনেক বড় ব্যাপার। তাই পোশাক-পরিচ্ছেদ থেকে শুরু করে আপনার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, সবকিছুতেই মনোযোগ দেওয়া উচিত।
প্রশ্ন করার সুযোগকে কাজে লাগান
সাক্ষাৎকারের শেষে অনেক সময় আপনাকে প্রশ্ন করার সুযোগ দেওয়া হয়। এটাকে কখনই মিস করবেন না! এই সুযোগটা আসলে আপনার আগ্রহ এবং কোম্পানির প্রতি আপনার মনোযোগের একটা প্রমাণ। আপনি কোম্পানির কাজ সম্পর্কে, তাদের ভিশন সম্পর্কে বা আপনার কাজের ক্ষেত্র সম্পর্কে প্রশ্ন করতে পারেন। এতে একদিকে যেমন আপনি কোম্পানি সম্পর্কে আরও জানতে পারবেন, তেমনই অন্যদিকে নিয়োগকর্তারাও বুঝবেন যে, আপনি কতটা সিরিয়াস এই চাকরির ব্যাপারে। আমি একবার একটা ইন্টারভিউতে প্রশ্ন করেছিলাম, ‘এই পদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী হতে পারে?’ এই প্রশ্নটা শুনে ইন্টারভিউয়াররা বেশ মুগ্ধ হয়েছিলেন এবং তারা আমার প্রতি বেশ ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছিলেন। তাই বলছি, প্রশ্ন করার সুযোগ পেলে স্মার্টলি সেটাকে কাজে লাগান!
글কে শেষ করার সময়
বন্ধুরা, আমাদের এই লম্বা পথচলায় টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দুনিয়ার অনেক অলিগলি ঘুরে এলাম, তাই না? এটা শুধু একটা পেশা নয়, এটা একটা জীবনদর্শন। প্রতিটি ধাপে আমরা নতুন কিছু শিখি, নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হই এবং নিজেদেরকে আরও শাণিত করি। মনে রাখবেন, শেখার কোনো শেষ নেই, আর এই ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকতে হলে আপনাকে সবসময় সময়ের সাথে চলতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, আপনারা প্রত্যেকেই নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারবেন, যদি সঠিক দিকনির্দেশনা এবং কঠোর পরিশ্রমের সাথে এগিয়ে যান। আপনাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হোক, এই কামনা করি।
কিছু দরকারী তথ্য জেনে নিন
১. নিজেকে সবসময় আপডেটেড রাখুন: টেক্সটাইল সেক্টরের নতুন প্রযুক্তি, যেমন AI, ডিজিটালাইজেশন এবং সাসটেইনেবল ফ্যাশন সম্পর্কে নিয়মিত জ্ঞান অর্জন করুন।
২. ব্যবহারিক অভিজ্ঞতার গুরুত্ব: শুধু বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ না থেকে ইন্টার্নশিপ, প্রজেক্ট বা ফ্যাক্টরি ভিজিটের মাধ্যমে হাতে-কলমে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করুন।
৩. মূল বিষয়গুলিতে জোর দিন: ফাইবার বিজ্ঞান, ইয়ার্ন ম্যানুফ্যাকচারিং, ফেব্রিক কনস্ট্রাকশন এবং ওয়েট প্রসেসিংয়ের মতো কোর সাবজেক্টগুলিতে গভীর দখল রাখুন।
৪. যোগাযোগ ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করুন: সাক্ষাৎকার এবং কর্মজীবনে সফল হওয়ার জন্য আপনার যোগাযোগ দক্ষতা এবং আত্মবিশ্বাস অত্যন্ত জরুরি।
৫. সাধারণ জ্ঞান ও ভাষা চর্চা: গণিত, ইংরেজি এবং সাধারণ জ্ঞানে ভালো দখল আপনাকে অন্যদের থেকে এক ধাপ এগিয়ে রাখবে, তাই নিয়মিত চর্চা করুন।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির সারসংক্ষেপ
ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত থাকুন
বর্তমান টেক্সটাইল শিল্প দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে, তাই নিজেকে সবসময় আপডেটেড রাখাটা খুবই জরুরি। শুধু প্রচলিত জ্ঞান নয়, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI), ডিজিটালাইজেশন এবং টেকসই ফ্যাশনের মতো নতুন প্রযুক্তিগুলো সম্পর্কেও ধারণা থাকা দরকার। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, যারা নতুনত্বের সাথে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে, তারাই কর্মজীবনে দ্রুত উন্নতি করে। এই শিল্পে টিকে থাকতে হলে আপনাকে প্রতিনিয়ত শিখতে হবে, নতুন দক্ষতা অর্জন করতে হবে এবং পুরনো ধারণাগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। প্রযুক্তির ব্যবহার আপনাকে আরও কার্যকর এবং দক্ষ করে তুলবে, যা আপনার কর্মজীবনের জন্য এক নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। নিজেকে একজন মাল্টি-স্কিলড টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে গড়ে তোলার এটাই উপযুক্ত সময়।
ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা এবং মূল জ্ঞানের গুরুত্ব
চাকরির বাজারে টিকে থাকার জন্য শুধু তাত্ত্বিক জ্ঞান যথেষ্ট নয়, ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা থাকাটা ভীষণ জরুরি। বিভিন্ন ইন্টার্নশিপ, ছোটখাটো প্রজেক্ট বা শিল্প-কারখানায় কাজ করার সুযোগ থাকলে সেগুলোকে কাজে লাগান। কারণ নিয়োগকর্তারা এখন এমন কর্মী খুঁজছেন যারা বাস্তব সমস্যা সমাধানে পারদর্শী। একইসাথে, ফাইবার বিজ্ঞান, সুতা উৎপাদন, কাপড় বুনন এবং ওয়েট প্রসেসিংয়ের মতো টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কোর সাবজেক্টগুলোতে আপনার গভীর দখল থাকা আবশ্যক। এই বিষয়গুলো আপনার ভিত্তিকে মজবুত করবে এবং যেকোনো নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আপনাকে সাহায্য করবে। আমি নিজে যখন কোর সাবজেক্টগুলোতে ভালোভাবে মনোযোগ দিয়েছিলাম, তখন দেখেছি যেকোনো জটিল পরিস্থিতিতে আত্মবিশ্বাসের সাথে সিদ্ধান্ত নেওয়া কতটা সহজ হয়।
যোগাযোগ দক্ষতা এবং ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য
আত্মবিশ্বাস এবং যোগাযোগ দক্ষতা একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারের জন্য অপরিহার্য। আপনি যতই জ্ঞানী হন না কেন, যদি নিজেকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে না পারেন, তাহলে আপনার দক্ষতাগুলো আড়ালেই থেকে যাবে। ইন্টারভিউ থেকে শুরু করে দৈনন্দিন কর্মজীবনের প্রতিটি ধাপে আপনার স্পষ্ট কথা বলার ক্ষমতা, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ এবং মানুষের সাথে মেশার ক্ষমতা আপনাকে অন্যদের থেকে এগিয়ে রাখবে। নেটওয়ার্কিং গড়ে তোলাও খুব জরুরি; এর মাধ্যমে আপনি নতুন সুযোগের সন্ধান পাবেন এবং অন্যদের অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে পারবেন। মনে রাখবেন, ভালো সম্পর্ক এবং ব্যক্তিগত আকর্ষণ আপনার কর্মজীবনে বড় ভূমিকা পালন করে। আমি তো সবসময়ই বলি, টেকনিক্যাল জ্ঞানের পাশাপাশি এই সফট স্কিলগুলো আপনাকে পরিপূর্ণ করে তোলে এবং সাফল্যের পথে এগিয়ে নিয়ে যায়।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ) 📖
প্র: চাকরির লিখিত পরীক্ষার জন্য কীভাবে নিজেকে প্রস্তুত করব, বিশেষ করে যখন প্রতিযোগিতা এত বেশি?
উ: এই প্রশ্নটা প্রায়ই আমার কাছে আসে, আর সত্যি বলতে, আমিও যখন তোমাদের মতো চাকরির বাজারে ঢুকছিলাম, তখন এই একই চিন্তা আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিল। এখনকার দিনে রেফারেন্সের চেয়ে নিজের যোগ্যতাই আসল। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে তোমরা তো জানো, মূল বিষয়গুলো (যেমন ফ্যাবরিক স্ট্রাকচার, ইয়ার্ন টেকনোলজি, ওয়েট প্রসেসিং, গার্মেন্ট ম্যানাকচারিং) কতটা জরুরি। এগুলো তো পড়তেই হবে, কিন্তু শুধু বইয়ের পাতা উল্টালেই হবে না। আমি নিজে দেখেছি, যারা প্রতিটি টপিকের গভীরে যায়, ব্যবহারিক জ্ঞানকে গুরুত্ব দেয়, তারা অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকে। একটা জিনিস খেয়াল রাখবে, প্রশ্নকর্তারা শুধু মুখস্থ বিদ্যার চেয়ে সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা দেখতে চান। তাই বিগত বছরের প্রশ্নপত্রগুলো ভালোভাবে সমাধান করো, মক টেস্ট দাও। আর শুধু টেক্সটাইলে আটকে থাকলে হবে না, সাধারণ জ্ঞান, গণিত আর ইংরেজিও দারুণভাবে ঝালিয়ে নাও। আমার এক বন্ধু আছে, নাম রিয়াজ, সে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে খুব ভালো ছিল, কিন্তু গণিত আর ইংরেজিতে একটু দুর্বল ছিল। পরে সে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় এই বিষয়গুলো অনুশীলন করে নিজেকে এতটাই শাণিত করেছিল যে, সে এখন একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে বেশ ভালো অবস্থানে আছে। এটা আমার নিজের দেখা অভিজ্ঞতা, তাই বলছি – পরিশ্রম আর সঠিক গাইডেন্স থাকলে সব সম্ভব!
প্র: শুধু টেক্সটাইলের কোর সাবজেক্ট পড়লেই কি হবে, নাকি আরও কিছু জানার দরকার আছে?
উ: দারুণ একটা প্রশ্ন! আগে হয়তো শুধু কোর সাবজেক্ট জানলেই চলতো, কিন্তু এখন সময় অনেক বদলে গেছে। আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, এই যুগে টিকে থাকতে হলে শুধু বইয়ের পড়াশোনায় সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। টেক্সটাইলের মূল বিষয়গুলো তো আপনার ভিত্তি, সেটাতে কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। তবে এর সাথে সাথে আপনাকে আরও কিছু বিষয়ে চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। যেমন, পরিবেশ সচেতনতা এবং টেকসই ফ্যাশন (Sustainable Fashion) এখন ইন্ডাস্ট্রির মূল চালিকাশক্তি। কীভাবে আমরা কম পানি ব্যবহার করতে পারি, বর্জ্য কমাতে পারি, ইকো-ফ্রেন্ডলি পণ্য তৈরি করতে পারি – এই বিষয়গুলো নিয়ে আপনার স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। এছাড়াও, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট, কোয়ালিটি কন্ট্রোল, প্রোডাকশন প্ল্যানিং এবং লিডারশিপ স্কিল – এগুলোও খুব জরুরি। আমি যখন প্রথম চাকরিতে ঢুকি, তখন মনে হয়েছিল শুধু টেকনিক্যাল জ্ঞানই যথেষ্ট। কিন্তু কিছুদিন পরেই বুঝলাম, কমিউনিকেশন আর টিমওয়ার্ক কতটা গুরুত্বপূর্ণ। নিজেকে একজন অলরাউন্ডার হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করো। আমার মনে আছে, একবার একটা প্রেজেন্টেশন দিতে গিয়ে আমি কিছুটা নার্ভাস ছিলাম, কারণ টেকনিক্যাল পয়েন্টগুলো খুব ভালো জানলেও, কথা বলার ধরনে ততটা সাবলীল ছিলাম না। এরপর আমি নিয়মিত প্রেজেন্টেশন স্কিলের উপর কাজ করেছি, যা আমাকে পরে অনেক সাহায্য করেছে। তুমিও এই দিকগুলোয় মনোযোগ দাও, দেখবে অনেক আত্মবিশ্বাস পাবে।
প্র: টেক্সটাইল সেক্টরে নতুন ট্রেন্ড যেমন AI বা টেকসই ফ্যাশন নিয়ে কীভাবে ওয়াকিবহাল থাকব?
উ: একদম ঠিক ধরেছো! সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে না চললে পিছিয়ে পড়তে হয়। AI, মেশিন লার্নিং, রোবোটিক্স এবং টেকসই ফ্যাশন – এগুলো এখন শুধু ফ্যাশন নয়, আমাদের টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রির ভবিষ্যৎ। আমি নিজেই নিয়মিত ব্লগ পোস্ট পড়ি, ওয়েবিনার দেখি আর বিভিন্ন অনলাইন কোর্স করি এসব বিষয়ে আপডেটেড থাকার জন্য। তুমিও LinkedIn-এ টেক্সটাইল লিডারদের ফলো করতে পারো, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টেক্সটাইল ফোরাম বা গ্রুপে যুক্ত হতে পারো। এর মাধ্যমে শুধু নতুন তথ্যই পাবে না, বরং এই সেক্টরের অভিজ্ঞদের সাথে নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগও তৈরি হবে। টেক্সটাইল ফেয়ারগুলো যেমন ITMA, Première Vision – এগুলোতে ভার্চুয়ালি হলেও অংশগ্রহণ করার চেষ্টা করো। তারা নতুন টেকনোলজি আর ইনোভেশনগুলো তুলে ধরে। আর হ্যাঁ, ইউটিউবে অনেক ভালো কন্টেন্ট ক্রিয়েটর আছেন যারা টেক্সটাইল টেকনোলজি এবং সাসটেইনেবিলিটি নিয়ে ভিডিও বানান, সেগুলোও দেখতে পারো। ধরো, কিছুদিন আগে আমি একটা ওয়েবিনার দেখছিলাম যেখানে দেখানো হচ্ছিলো কীভাবে AI ব্যবহার করে কাপড়ের মান আরও নিখুঁতভাবে পরীক্ষা করা হচ্ছে, কিংবা কীভাবে রিসাইকেল করা ফাইবার দিয়ে নতুন পোশাক তৈরি হচ্ছে। এই অভিজ্ঞতাগুলো আমাকে শুধু জ্ঞানই দেয়নি, নতুন নতুন আইডিয়াও দিয়েছে। তাই সবসময় শেখার মানসিকতা ধরে রাখো, নতুন কিছু জানতে কৌতূহলী হও। এটাই তোমাকে অন্যদের থেকে এক ধাপ এগিয়ে রাখবে, আমি নিশ্চিত!






